ডেস্ক নিউজ:

সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার জের ধরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় আসছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর কার্যালয়ের ইউনিয়নমন্ত্রী কিয়াও টিন্ট সয়ে। তার সফরে ‘জোরপূর্বক বাস্তুহারা মিয়ানমারের নাগরিক’দের ফিরিয়ে নেয়ার ইস্যুটিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।

বাংলাদেশ জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের দেয়া প্রস্তাবের অনতিবিলম্বে পূর্ণ বাস্তবায়ন চাইবে। তবে কক্সবাজারে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের শরণার্থী শিবিরে থাকা নাগরিকদের ফিরিয়ে দিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, উদ্ধত রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে রোববার রাতে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকা আসছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর কার্যালয়ের ইউনিয়নমন্ত্রী কিয়াও টিন্ট সয়ে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সোমবার বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ‘জোরপূর্বক বাস্তুহারা মিয়ানমারের নাগরিক’দের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টিই প্রধান্য থাকবে। তবে শুরুতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি থাকবে ৯০-এর দশকে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের নাগরিক, বর্তমানে যারা ইউএনএইচসিআর পরিচালিত শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন তাদের আগে ফিরিয়ে নিতে হবে। পরবর্তিতে বাকি নাগরিকদেরও যাচাই-বাছাই করে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসবে ঢাকা।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মিয়ানমার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেনি। বরং এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছে বলে তারা জাতিসংঘকে জানিয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের প্রতিনিধিকে রোহিঙ্গা সমস্যা সামাধানের জন্য একটি প্রস্তাব হস্তান্তর করেছে। ঢাকায় বৈঠকে শুরুতে বাংলাদেশ শরণার্থী শিবিরে যাচাই-বাছাই সম্পন্ন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাপ দিবে ঢাকা।

তিনি বলেন, নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের যেহেতু নাগরিকদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করে ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলছে মিয়ানমার। তাতে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। ফলে মিয়ানমার নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় শুধু মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ করলে হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ শর্ত জুড়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসা এসব রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করে তাদের ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়ায় অংশ নিবে। মিয়ানমারের মন্ত্রীর সফরকালে টেকনাফ ও উখিয়া পরিদর্শনের জন্য অনুরোধ করবে বাংলাদেশ।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী নতুন করে অভিযান শুরুর পর গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। জাতিসংঘ রাখাইনের ওই সেনা অভিযানকে চিহ্নিত করেছে জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে। গত কয়েক দশক ধরে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশ বলে আসছে, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের জায়গা দেয়া হলেও মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে বলে জাতিসংঘে জানিয়েছে বাংলাদেশ।

সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অষ্টম পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে সময়ে দুই মাসের মধ্যে শিবিরে থাকা তালিকাভুক্ত ২ হাজার ৪১৫ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মিয়ানমার। তবে এখনও তাদের ফিরিয়ে নেয়নি দেশটি। সর্বশেষ ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত্ পাঠানো হয়েছিল। এরপর থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে।

উল্লেখ্য, ইউএনএইচসিআর পরিচালিত কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত প্রায় ৩২ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে।